ঢাকা ০৬:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকাকে যা বললেন সু চি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৬:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে ঢাকা। এ ব্যাপারে শিগগিরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মিয়ানমার সফর করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমারে তিন দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করে এসেছি। বাকিটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে সম্পন্ন হবে। ’

চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মুখে সোমবার পূর্বনির্ধারিত মিয়ানমার সফরে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এ এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সফিউর রহমান, মন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাসসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।

গতকাল সন্ধ্যায় তারা দেশে ফিরে আসেন। এদিকে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি উৎসাহ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন।

দেশে ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের মন্ত্রীর সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে বিষয়টি এবারও আলোচনায় এসেছে। ওই কমিটিতে দুই দেশের সমানসংখ্যক সদস্য থাকবে। কমিটি গঠনে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। এ ব্যাপারে শিগগির কাজ শুরু হবে। ’

আসাদুজ্জামান খান কামাল রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তার এই সফরকে ফলপ্রসূ হিসেবে দেখছেন। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে বলেও আশা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেত্রী অং সান সু চিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সু চি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। সফরকালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তারা সম্মত বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। একই ইস্যুতে আলোচনার জন্য শিগগির মিয়ানমার সফরে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

সু চি-কামাল বৈঠক: এর আগে গতকাল সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ‘আন্তরিক পরিবেশে’ প্রায় এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে কথা হয়।

এ বৈঠক সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। এ ছাড়া কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও মিয়ামার সরকার কাজ করছে। ’

জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠকে সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। সু চি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। দুই মাস আগে রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিত হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে শুরু হয় রোহিঙ্গার ঢল। রোহিঙ্গাদের আসা এখনো বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে সু চির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার মধ্যেই দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার মিয়ানমারে পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মিয়ানমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকগুলোয় স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উঠে আসে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, গত দুই দিনে সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেসব বিষয়ে গতকাল মিয়ানমার নেত্রীকে অবহিত করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও তাকে জানানো হয়েছে। সু চি এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও সু চিকে বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সু চিকে বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী প্রশ্রয় পাবে না। তবে অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত ফিরিয়ে না নিলে এদের অনেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তখন পরিস্থিতি বাংলাদেশ বা মিয়ানমার- কারও অনুকূলে থাকবে না। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার মতো মাদক পাচার যে ভয়াবহ রূপ পেয়েছে, সে কথাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার নেত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন। সু চি তখন বলেন, তার দেশের যুবসমাজও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার বন্ধে তার সরকার সীমান্ত বন্ধ করবে।

জাতিসংঘের অভিযোগের তীর সু চির দিকে: জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাখাইনের এবারের সংকটের সূচনাকালে পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত ও কাঠামোবদ্ধ কায়দায় রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা-প্রচারণা চালানো হয়েছিল। সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশন বলছে, সেনা অভিযান শুরুর আগের সেই প্রচারণাকে সু চির কার্যালয় থেকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। গতকাল মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে কমিশনের প্রধান রাদ আল হোসাইন এসব কথা বলেন।

রাদ হোসাইন এনপিআরকে জানান, মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল জানুয়ারিতে। সে সময় সু চি তাকে জানিয়েছিলেন, সামরিক অভিযান ঠেকাতে তার সাধ্যমতো তিনি চেষ্টা করেছেন। কোনো ফল হয়নি। রাদ আল হোসাইন সু চির সেই বক্তব্যকে সত্য মনে করেন না। এনপিআরকে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, যা করার ছিল, তার সবকিছু সু চি করেছেন। ’ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার নীরবতার প্রশ্নে তিনি বলেন ‘সু চি তার জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক ছিলেন। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে আরও সরব হওয়ার কথা ছিল তার। তিনি পারতেন, আরও বেশি কিছু করতে। ’

ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে রাদ হোসাইন বলেন, ‘আমাকে যখন বলা হলো তার কোনো ক্ষমতা নেই, আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমার মাথায় প্রশ্ন এসেছিল, এমন ভয়াবহ একটা ইস্যুতেও যদি ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম না হন সু চি, তবে এই রাষ্ট্রীয় অবস্থানে থেকে তার কী লাভ। ’ সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঢাকাকে যা বললেন সু চি

আপডেট টাইম : ০৯:১৬:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মিয়ানমারের সামরিক অভিযানের মুখে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির নেত্রী অং সান সু চির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছে ঢাকা। এ ব্যাপারে শিগগিরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী মিয়ানমার সফর করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমারে তিন দিনের সফর শেষে দেশে ফিরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করে এসেছি। বাকিটা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে সম্পন্ন হবে। ’

চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মুখে সোমবার পূর্বনির্ধারিত মিয়ানমার সফরে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, কোস্টগার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এ এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী, মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সফিউর রহমান, মন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাসসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা।

গতকাল সন্ধ্যায় তারা দেশে ফিরে আসেন। এদিকে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি উৎসাহ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন।

দেশে ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের মন্ত্রীর সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে বিষয়টি এবারও আলোচনায় এসেছে। ওই কমিটিতে দুই দেশের সমানসংখ্যক সদস্য থাকবে। কমিটি গঠনে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। এ ব্যাপারে শিগগির কাজ শুরু হবে। ’

আসাদুজ্জামান খান কামাল রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে তার এই সফরকে ফলপ্রসূ হিসেবে দেখছেন। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে বলেও আশা করছেন তিনি। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সর্বোচ্চ মহল থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেত্রী অং সান সু চিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সু চি সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। সফরকালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তারা সম্মত বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। একই ইস্যুতে আলোচনার জন্য শিগগির মিয়ানমার সফরে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

সু চি-কামাল বৈঠক: এর আগে গতকাল সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তাদের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ‘আন্তরিক পরিবেশে’ প্রায় এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে কথা হয়।

এ বৈঠক সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। এ ছাড়া কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও মিয়ামার সরকার কাজ করছে। ’

জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠকে সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। সু চি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। দুই মাস আগে রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে সমন্বিত হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হয়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে শুরু হয় রোহিঙ্গার ঢল। রোহিঙ্গাদের আসা এখনো বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে সু চির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার মধ্যেই দুই দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার মিয়ানমারে পৌঁছান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মিয়ানমার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকগুলোয় স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি উঠে আসে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরও জানান, গত দুই দিনে সচিব ও মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেসব বিষয়ে গতকাল মিয়ানমার নেত্রীকে অবহিত করেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও তাকে জানানো হয়েছে। সু চি এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথাও সু চিকে বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সু চিকে বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী প্রশ্রয় পাবে না। তবে অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত ফিরিয়ে না নিলে এদের অনেকেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। তখন পরিস্থিতি বাংলাদেশ বা মিয়ানমার- কারও অনুকূলে থাকবে না। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার মতো মাদক পাচার যে ভয়াবহ রূপ পেয়েছে, সে কথাও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার নেত্রীর সামনে তুলে ধরেছেন। সু চি তখন বলেন, তার দেশের যুবসমাজও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার বন্ধে তার সরকার সীমান্ত বন্ধ করবে।

জাতিসংঘের অভিযোগের তীর সু চির দিকে: জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাখাইনের এবারের সংকটের সূচনাকালে পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত ও কাঠামোবদ্ধ কায়দায় রোহিঙ্গাবিরোধী সেনা-প্রচারণা চালানো হয়েছিল। সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশন বলছে, সেনা অভিযান শুরুর আগের সেই প্রচারণাকে সু চির কার্যালয় থেকে উৎসাহিত করা হয়েছিল। গতকাল মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে কমিশনের প্রধান রাদ আল হোসাইন এসব কথা বলেন।

রাদ হোসাইন এনপিআরকে জানান, মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল জানুয়ারিতে। সে সময় সু চি তাকে জানিয়েছিলেন, সামরিক অভিযান ঠেকাতে তার সাধ্যমতো তিনি চেষ্টা করেছেন। কোনো ফল হয়নি। রাদ আল হোসাইন সু চির সেই বক্তব্যকে সত্য মনে করেন না। এনপিআরকে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না, যা করার ছিল, তার সবকিছু সু চি করেছেন। ’ মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার নীরবতার প্রশ্নে তিনি বলেন ‘সু চি তার জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক ছিলেন। আমার সব সময়ই মনে হয়েছে আরও সরব হওয়ার কথা ছিল তার। তিনি পারতেন, আরও বেশি কিছু করতে। ’

ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে রাদ হোসাইন বলেন, ‘আমাকে যখন বলা হলো তার কোনো ক্ষমতা নেই, আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। আমার মাথায় প্রশ্ন এসেছিল, এমন ভয়াবহ একটা ইস্যুতেও যদি ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম না হন সু চি, তবে এই রাষ্ট্রীয় অবস্থানে থেকে তার কী লাভ। ’ সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন